
প্রাইজবন্ড কি সুদমুক্ত বিনিয়োগ?
প্রাইজবন্ড হলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত একটি আর্থিক উপকরণ, যা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। এই বন্ডের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর সুদমুক্ত প্রকৃতি। এটি একটি বাহক চেক বা অঙ্গীকারপত্র, যেখানে বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর কোনো নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করা হয় না। প্রচলিত ব্যাংক আমানত বা বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে যেমন নিয়মিত বিরতিতে সুদ বা মুনাফা দেওয়া হয়, প্রাইজবন্ডে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রাইজবন্ডের ধারকরা তাদের বিনিয়োগের উপর সরাসরি কোনো আর্থিক রিটার্ন পান না, বরং তারা লটারির মাধ্যমে পুরস্কার জেতার সুযোগ পান।
প্রাইজবন্ডের মূল আকর্ষণ বা উদ্দেশ্য হলো লটারি ড্র, যা নিয়মিত বিরতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এই লটারি ড্রতে বিজয়ী বন্ডের ধারকরা একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার লাভ করেন। এখানে অর্থ বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো এই পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা তৈরি করা, সুদের মাধ্যমে আয় অর্জন করা নয়। এই কারণে প্রাইজবন্ডকে অনেকে 'সুদমুক্ত লটারি বন্ড' বা 'ভাগ্য বন্ড' হিসেবে উল্লেখ করেন। এটি একটি ঝুঁকিমুক্ত সঞ্চয় প্রকল্প, কারণ বিনিয়োগকৃত মূলধন হারানোর কোনো ঝুঁকি থাকে না। বিনিয়োগকারী তার বন্ডের অভিহিত মূল্য যেকোনো সময় ফেরত নিতে পারেন, তবে এর উপর কোনো বাড়তি অর্থ পান না যদি না তার বন্ডটি লটারিতে বিজয়ী হয়।
প্রাইজবন্ডের এই সুদমুক্ত বৈশিষ্ট্য এটিকে প্রচলিত ইসলামিক অর্থব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে। ইসলামিক নীতি অনুযায়ী, সুদের লেনদেন নিষিদ্ধ। তাই, যারা ইসলামিক শরীয়াহ মোতাবেক বিনিয়োগ করতে চান এবং সুদমুক্ত লেনদেন পছন্দ করেন, তাদের জন্য প্রাইজবন্ড একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প। এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখে এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে যারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তাদের জন্য একটি পথ তৈরি করে। প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে সরকার জনগণের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করে, যা দেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
এই সুদমুক্ততার কারণে প্রাইজবন্ডকে লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হয় না, যেখানে নিয়মিত রিটার্ন বা মুনাফা আশা করা যায়। বরং, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় বা অর্থ সংরক্ষণের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, যেখানে লটারির মাধ্যমে অপ্রত্যাশিত পুরস্কার জেতার একটি সুযোগ থাকে। এটি মূলত ভাগ্যের উপর নির্ভর করে এবং বিনিয়োগকারীর মূলধনকে সুরক্ষিত রাখে। প্রাইজবন্ডের মূল্যমান ১০০ টাকা এবং এটি দেশের যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যাশ অফিস এবং ডাকঘর থেকে কেনা ও ভাঙানো যায়। এই সহজলভ্যতা এটিকে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে একটি পরিচিত আর্থিক উপকরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। অতএব, প্রাইজবন্ডের মূল পরিচয় হলো এটি একটি সুদমুক্ত আর্থিক উপকরণ যা পুরস্কার জেতার সুযোগ প্রদান করে, কোনো নিয়মিত সুদ বা মুনাফা প্রদান করে না। এটি একটি অনন্য আর্থিক পণ্য যা সঞ্চয় এবং অপ্রত্যাশিত পুরস্কারের সমন্বয় ঘটায়।
Latest Blog
প্রাইজবন্ডে যদিও পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম, তবুও মানুষ এই প্রাইজবন্ড কেনার মাধ্যমে নি...
২৯ মে ২০২৪ ৪,৩৭৭
প্রাচুর্য ডট কম একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম হলেও, এটির আরো উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। প্রাচুর্য ডট কমের শক্...
১৫ জানুয়ারী ২০২৫ ১,০৮৮
১০০০ পিস প্রাইজবন্ড কিনেও পুরস্কার না পাওয়া হতাশাজনক হলেও এটি বাস্তব। তি ১০ লাখ প্রাইজবন্ডের মধ্যে...
০৬ জুন ২০২৪ ৩,১১৮
প্রাইজবন্ডের কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। ১. অনিশ্চয়তা: প্রাইজবন্ডের প্রধান নেতিবাচক দিক হলো এর অনিশ্...
১৮ মে ২০২৪ ২,৭৪১
প্রাইজবন্ডের ড্র বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে 'ড্র' কমিটি কর্তৃক পরিচালিত হয়। ড্র অনুষ্ঠ...
০৭ মে ২০২৪ ২,৪৬৭
কার্যকর থাকলেই যে সকল প্রাইজবন্ড সকল ড্র’তে অংশ নিবে এমন নয়। আপনার কেনা প্রাইজবন্ড ড্রতে আসবে কিনা এ...
২৬ অক্টোবর ২০২৪ ২,১৯৪
আমাদের সবার স্বপ্ন একটাই—৬ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার জেতা আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রাইজবন...
১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১,৩৫৪
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাইজবন্ড উলটো করে ধরলে, যদি কেউ পূর্বে টাকা উত্তোলন করে থাকে, সেখানে একটি সিল দেওয়...
১২ অক্টোবর ২০২৪ ২,০৮৬
প্রাইজবন্ডে কোনো নির্দিষ্ট হারে সুদ বা মুনাফা দেওয়া হয় না, বরং লটারির মাধ্যমে পুরস্কার জেতার সুযোগ থ...
০২ জুন ২০২৫ ১৯৯