১০ বছরেও প্রাইজবন্ড পুরস্কার না পাওয়ার কারণ।

১০ বছরেও প্রাইজবন্ড পুরস্কার না পাওয়ার কারণ।

প্রাইজবন্ড কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। যদি আপনি উদ্দেশ্য না জেনেই প্রাইজবন্ড কেনেন, তাহলে পরে আফসোস হতে পারে। চলুন জেনে নিই, কোন পরিস্থিতিতে প্রাইজবন্ড কেনা উচিত এবং কখন তা এড়িয়ে চলা ভালো।

কেন প্রাইজবন্ডে পুরস্কার জেতা কঠিন?

অনেকেই বড় পুরস্কার জেতার আশায় প্রাইজবন্ড কেনেন। তবে, এই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশিরভাগ সময়ই পূরণ হয় না। অনেকেই নিজের বা সন্তানের ভাগ্য পরীক্ষা করার জন্য প্রাইজবন্ড কেনেন, যা একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করে। অসংখ্য মানুষ প্রাইজবন্ড কিনলেও পুরস্কার পান খুব কম সংখ্যক। এর কারণ অর্থনীতিতে সাপ্লাই এবং ডিমান্ড-এর একটি মৌলিক নীতি।
সহজ কথায়, যদি বাজারে কোনো জিনিসের সাপ্লাই বেশি থাকে এবং চাহিদা কম থাকে, তাহলে তার দাম কমে যায়। উল্টো দিকে, যদি সাপ্লাই কম থাকে এবং চাহিদা বেশি থাকে, তাহলে সেই জিনিসের দাম বেড়ে যায়।
প্রাইজবন্ডের ক্ষেত্রেও একই নীতি কাজ করে। বাজারে প্রাইজবন্ডের সংখ্যা অনেক বেশি কিন্তু এর বিপরীতে পুরস্কারের সংখ্যা অনেক কম। প্রতি সিরিজে দশ লাখ প্রাইজবন্ড চালু থাকে। এই দশ লাখ প্রাইজবন্ডের বিপরীতে প্রতি তিন মাস অন্তর মাত্র ৪৬টি প্রাইজবন্ড পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়। তাই, প্রচুর মানুষ প্রাইজবন্ড কিনলেও খুব কম সংখ্যক মানুষই পুরস্কার পান।

প্রাইজবন্ডে বিনিয়োগের আর্থিক ক্ষতি

আপনি যদি দশ বছর ধরে প্রাইজবন্ড কিনে থাকেন এবং কোনো পুরস্কার না পেয়ে থাকেন, তাহলে এক ধরনের হতাশা অনুভব করা স্বাভাবিক। এই হতাশার ফলস্বরূপ অনেকেই হয়তো একসময় প্রাইজবন্ডগুলো বিক্রি করে দেবেন। এর ফলে কিছু আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
যেমন, মূল্যস্ফীতির কারণে দশ বছর আগে যে পরিমাণ অর্থ দিয়ে প্রাইজবন্ড কিনেছিলেন, সেই অর্থের ক্রয় ক্ষমতা এখন কমে গেছে। ধরা যাক, দশ বছর আগে আপনি ১০০০ টাকা দিয়ে ১০টি প্রাইজবন্ড কিনেছিলেন। সেই ১০০০ টাকা দিয়ে তখন আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য কিনতে পারতেন। দশ বছর পর সেই ১০টি প্রাইজবন্ড বিক্রি করে আপনি হয়তো সেই ১০০০ টাকাই ফেরত পেলেন, কিন্তু সেই ১০০০ টাকা দিয়ে এখন আগের মতো পণ্য কিনতে পারবেন না। কারণ, দশ বছরে পণ্যের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ, আপনার টাকার আসল মূল্য কমে গেছে। উপরন্তু, যদি এই অর্থ ব্যাংকে রাখা হতো, তাহলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ পাওয়া যেত, এখন সেটিও পেলেন না।

প্রাইজবন্ড কেনার সঠিক উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত?

আমরা প্রাইজবন্ড কেনার বিরোধিতা করছি না। আমরা শুধু বলতে চাইছি, প্রাইজবন্ড কেনার আগে একটি সঠিক উদ্দেশ্য থাকা উচিত। পুরস্কার জেতার আশায় প্রাইজবন্ড কিনলে আপনি হতাশায় ভুগতে পারেন। এর বদলে সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাইজবন্ড কিনলে, পুরস্কার না পেলেও হতাশা আসবে না।
প্রাইজবন্ডের জন্মই হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য। এর সঙ্গে প্রতি তিন মাস পর যে ড্র অনুষ্ঠিত হয়, তাতে যদি কোনো পুরস্কার জেতা যায়, সেটাকে একটি অতিরিক্ত প্রাপ্তি হিসেবে দেখা উচিত। এটি একটি বোনাস যা মূল লক্ষ্য নয়।
এই সঞ্চয় অনেকটা একটি মাটির ব্যাংকে অল্প অল্প করে টাকা জমানোর মতো। হয়তো ৫০০ বা ৭০০ টাকার মতো ছোট অঙ্কের অর্থ আপনি লাভজনক কোনো খাতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। অপ্রয়োজনে যেন এই টাকা খরচ না হয়ে যায়, সেজন্য প্রাইজবন্ড কিনে রাখা যেতে পারে। প্রতি মাসে যদি দশ বা বিশটি করে প্রাইজবন্ড কেনা হয়, তাহলে একসময় এই জমানো অর্থ বেশ বড় অঙ্কে পৌঁছাবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন মানুষ প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে ১০টি প্রাইজবন্ড কেনা শুরু করলেন। এক বছর পর তার হাতে ১২০টি প্রাইজবন্ড থাকবে, যার মোট মূল্য ১২,০০০ টাকা। পাঁচ বছর পর তার হাতে থাকবে ৬০০টি প্রাইজবন্ড, যার মোট মূল্য ৬০,০০০ টাকা। তখন এই অর্থ ভেঙে কোনো লাভজনক কাজে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে যদি প্রাইজবন্ডের কোনো ড্র'তে পুরস্কার আসে, তবে তা হবে একটি বোনাস।

পুরস্কার নয়, সঞ্চয়ই প্রাইজবন্ডের মূল কথা

আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন যারা ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ নিতে পছন্দ করেন না, বা ধর্মীয় কারণে সুদ এড়িয়ে চলেন। আবার, খুব অল্প পরিমাণ টাকা ব্যাংকে রাখলে যে সুদ পাওয়া যাবে, তার চেয়ে ব্যাংকের বার্ষিক সার্ভিস চার্জ বেশি কেটে নিতে পারে। এমন ব্যক্তিরা নিরাপদ সঞ্চয়ের একটি উপায় হিসেবে প্রাইজবন্ড কিনতে পারেন। এটি তাদের জন্য একটি বিকল্প পথ হতে পারে, যেখানে অর্থের একটি অংশ সঞ্চিত থাকে এবং একই সাথে পুরস্কার জেতার একটি ক্ষুদ্র সম্ভাবনাও থাকে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, প্রাইজবন্ড কেনার মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থ সঞ্চয় করা। পুরস্কার জেতাটা একটি সেকেন্ডারি উদ্দেশ্য। যদি কেউ পুরস্কার জেতাকেই প্রধান উদ্দেশ্য মনে করে প্রাইজবন্ড কেনেন, তাহলে তার জন্য হতাশা অপেক্ষা করছে। প্রাইজবন্ড একটি সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবেই অধিক কার্যকর। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, যেখানে পুরস্কার একটি কাকতালীয় ফল মাত্র।

১,১০০ মন্তব্য (০/০) ০৮ জুন ২০২৫

Latest Blog

আমাদের প্যাকেজের মেয়াদ লাইফটাইম কেন? Why is our package val...

আমরা বিশ্বাস করি, একবার যদি আপনি আমাদের সার্ভিস ব্যবহার করে সন্তুষ্ট হন, তাহলে আপনিই কিন্তু নিঃস্বার...

৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ১,৪১৯

প্রাইজবন্ডের ড্র কিভাবে অনুষ্ঠিত হয়?

প্রাইজবন্ডের ড্র বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে 'ড্র' কমিটি কর্তৃক পরিচালিত হয়। ড্র অনুষ্ঠ...

০৭ মে ২০২৪ ৩,০৪৯

নূরুল আমিন প্রথম পুরস্কার বিজয়ী, ১১৭তম প্রাইজবন্ড ড্র

৫২ বছরের নূরুল আমিন ১১৭তম প্রাইজবন্ড ড্র'তে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন। তার প্রাইজবন্ডের নাম্বারটি হলো গ...

০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৮,৪৩৭

মাহবুব মোরশেদ, ১১৬তম প্রাইজবন্ড ড্রর দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়...

দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর তিনি ১১৬তম ড্র'তে পেয়েছেন দ্বিতীয় পুরস্কার। মাহবুব মোরশেদ, ১১৬তম প্রাইজবন্ড ড্...

০২ আগষ্ট ২০২৪ ৯,৫৫০

প্রাইজবন্ড কর্তৃপক্ষের প্রতি খোলা চিঠি

১৯৯৫ সালে প্রাইজবন্ড চালু হলেও, গ্রাহকবান্ধব সংস্কারের অভাবে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। গ্রাহকদের ভোগান্ত...

২২ মে ২০২৪ ৪,০০৫

প্যাকেজের মেয়াদ লাইফটাইম কি এবং কেন?

আমাদের প্রধান লক্ষ্য শুধু বর্তমান গ্রাহকদের উপর বার্ষিক চার্জের বোঝা চাপানো নয়, বরং একটি আকর্ষণীয়...

১৯ মে ২০২৫ ৬৫৮

জোড়া বন্ডের সুবিধা অসুবিধা:

জোড়া বন্ডের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, এতে পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা অর্ধেক হয়ে যায়। দুটি বন্ড মিলে একটি ম...

২০ মে ২০২৫ ৭৬৪

প্রাইজবন্ডের ড্র প্রক্রিয়া কতটা নিরপেক্ষ?

বাংলাদেশে প্রাইজবন্ড ড্র নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা যায়, যা এর স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় তৈরি করে। অসম্পূর্...

৩১ মে ২০২৫ ৬৬০

প্রথম পুরস্কার বিজয়ী "সাইফ উদ্দীন রাজা"১১৪তম ড্র

সাইফ উদ্দীন রাজা, প্রাচুর্য ডট কমে তার প্রাইজবন্ডের নাম্বার এন্ট্রি করার পর জানতে পারেন যে তিনি ১১৪ত...

০৩ জুন ২০২৪ ৪,৯৪৮

প্রাইজবন্ড সম্পর্কিত ব্লগ সমূহ