
প্রাইজবন্ডের প্রতি অধিকাংশ মানুষের নেগেটিভ ধারণা কেন?
প্রাইজবন্ড দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং আকর্ষণীয় পুরস্কার জয়ের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে, এর পাশাপাশি অনেক মানুষের প্রাইজবন্ডের প্রতি নেতিবাচক ধারণাও বিদ্যমান। এই নেতিবাচক ধারণার পেছনে বেশ কিছু কারণ ভূমিকা রাখে।
১. দুর্নীতির অভিযোগ:
প্রাইজবন্ড ড্র-এর স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। "সিন্ডিকেট" বা "ঘরানা" তৈরি করে পুরস্কার জয়ের সম্ভাবনা বাড়ানোর অভিযোগ, ড্র প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রাইজবন্ডের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। এই সমস্যাগুলো প্রাইজবন্ডের জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা জনগণের মধ্যে প্রাইজবন্ডের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। যদিও এই অভিযোগগুলোর পক্ষে এখন পর্যন্ত কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবুও এই সমস্যাগুলো জনমনে প্রাইজবন্ডের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে এবং এর জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
২. কম পুরস্কার জয়ের সম্ভাবনা:
প্রাইজবন্ড কেনার মাধ্যমে পুরস্কার জয়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি মাসে প্রাইজবন্ড কিনলেও, কেবল কয়েকজনই বিজয়ী হতে পারে।
এটি একটি ভাগ্যের খেলা, যেখানে বিজয়ী নির্ধারণ করে সম্পূর্ণ ভাগ্য। প্রচুর প্রতিযোগী থাকা, পুরস্কারের সংখ্যা কম থাকা এবং সামগ্রিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে, প্রাইজবন্ড দ্রুত অর্থ লাভের নিশ্চিত উপায় নয়।
৩. বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ:
বর্তমানে বাজারে মিউচুয়াল ফান্ড, রিয়েল এস্টেট, এবং স্বর্ণের মতো আকর্ষণীয় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, যেখানে ঝুঁকি কম এবং রিটার্ন বেশি। এসব বিনিয়োগের মাধ্যমে মানুষ প্রাইজবন্ডের অনিশ্চিত মুনাফার চেয়ে অনেক বেশি টাকা উপার্জন করতে পারে, ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগ্রহও বেশি।
৪. দীর্ঘমেয়াদি লাভের অভাব:
প্রাইজবন্ড দীর্ঘমেয়াদি লাভের সুযোগ প্রদান করে না। কেবলমাত্র যারা পুরস্কার জেতে, তারাই টাকা পায়। এ কারণে এটি সুনির্দিষ্ট আয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে না, ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য এটি উপযুক্ত নয়।
৫. জুয়াখেলায় সাদৃশ্য:
অনেক মানুষ প্রাইজবন্ড কেনাকে জুয়াখেলার সাথে তুলনা করে। তাদের মনে হয় প্রাইজবন্ড কেনার মাধ্যমে সহজে টাকা আয় করা সম্ভব, যদিও বাস্তবে এটি খুবই কম ঘটে। প্রাইজবন্ডের উপর নির্ভর করে লাভের আশা করা আসলে এক ধরনের ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল খেলা, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হতাশা বয়ে আনে।
৬। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ: প্রাইজবন্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ এতে জয়ের সম্ভাবনা খুব কম।
উপসংহারঃ
প্রাইজবন্ডের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ, কম পুরস্কার জয়ের সম্ভাবনা, বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ, দীর্ঘমেয়াদি লাভের অভাব এবং জুয়াখেলার সাথে সাদৃশ্য এই নেতিবাচক ধারণার মূল কারণ। তবে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রাইজবন্ড কেনা ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। যারা ঝুঁকি নিতে চায় এবং সম্ভাব্য বড় পুরস্কার জয়ের আশায় থাকে তারা প্রাইজবন্ড কিনতে পারে। তবে, বিনিয়োগ করার আগে সকল ঝুঁকি ও সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
Latest Blog
সারাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি শাখা অফিস থেকে সারা বছর এবং যেকোনো সময় প্রাইজবন্ড কেনা যায়। এছাড়াও...
০৮ মে ২০২৪ ৫,৯৯৩
প্রাইজবন্ডে বিনিয়োগে কিছু ঝুঁকি থাকলেও এটি একেবারে ঝুঁকিমুক্ত বলা যায় না। মূলধন সুরক্ষার দিক থেকে...
২০ আগষ্ট ২০২৪ ২,১৪৬
১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্রতে ঘঘ সিরিজ অন্তর্ভুক্ত হলেও ২ মাস পূর্ণ না হওয়ায় এই সিরিজ থেকে কোনো পুরস্কার...
২০ জানুয়ারী ২০২৫ ৭,৭৯৯
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাইজবন্ড উলটো করে ধরলে, যদি কেউ পূর্বে টাকা উত্তোলন করে থাকে, সেখানে একটি সিল দেওয়...
১২ অক্টোবর ২০২৪ ২,৬৩১
প্রাইজবন্ড কেনার মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থ সঞ্চয় করা। পুরস্কার জেতাটা একটি কাকতালীয় ফল মাত্র।
০৮ জুন ২০২৫ ১,১১৯
লাইফটাইম মেয়াদ" মানে এটি চিরস্থায়ী নয়, বরং এটি নির্ভর করে সার্ভিসের অস্তিত্ব এবং আপনার সক্রিয় ব্যবহা...
০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১,২০৮
না, একজনের প্রাইজবন্ডের নাম্বার দিয়ে অন্য কেউ পুরস্কার নিতে পারবে না। প্রাইজবন্ড একটি বাহক দলিল, তা...
২৫ মে ২০২৪ ২,৭২৭
বাংলাদেশের প্রাইজবন্ড ঢাকার গাজীপুরে অবস্থিত সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড (এসপিসিব...
২৮ মে ২০২৪ ২,১১১
আপনার কাছে যদি ১৯৯৫, ২০০০, ২০০২ সালের পুরাতন প্রাইজবন্ড থাকে, হতাশ হবেন না! অনেকেই ভাবতে পারেন এত পু...
১৩ মে ২০২৪ ৩,৮৮৫