
প্রাইজবন্ডের প্রচলন কেন হয়েছিল?
বাংলাদেশে প্রাইজবন্ড দীর্ঘদিন ধরে একটি জনপ্রিয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই স্কিমটি সরকার, অর্থনীতি এবং জনগণের জন্য নানা সুবিধা বয়ে এনেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রাইজবন্ড আসলে কেন প্রচলন করা হয়েছিল?
১। স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন:
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল খুবই দুর্বল। দেশকে পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারকে জনগণের সঞ্চয় উৎসাহিত করতে এবং অর্থনীতিতে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে একটি কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল। এই লক্ষ্যে প্রাইজবন্ডের প্রবর্তন করা হয়।
২। সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা:
প্রাইজবন্ড সাধারণ মানুষের জন্য সঞ্চয়ের একটি সহজ ও সুবিধাজনক পদ্ধতি। এটি সহজেই কেনা যায় এবং এর জন্য বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হয় না, যা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই উপকারী। প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে মানুষ তাদের সঞ্চয়কে নিরাপদ রাখতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য অর্থ পরিকল্পনা করতে সক্ষম হয়। প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে সম্ভাব্য পুরস্কার জয়ের সুযোগও থাকে, যা অনেকের জন্য আকর্ষণীয়। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রচারণার মাধ্যমে প্রাইজবন্ড সাধারণ মানুষের জন্য একটি কার্যকর বিনিয়োগ মাধ্যম হতে পারে, যা তাদের আর্থিক স্বাধীনতা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করে।
৩। সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যতা:
বাংলাদেশের সমাজে সাধারণত ঝুঁকি কমিয়ে সঞ্চয় করার প্রবণতা বেশি। প্রাইজবন্ড এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ এটি ঝুঁকি ছাড়াই সঞ্চয়ের একটি মাধ্যম প্রদান করে। এর পাশাপাশি, প্রাইজবন্ড সম্ভাব্য পুরস্কার জয়ের সুযোগও দেয়, যা অনেকের জন্য আকর্ষণীয়। এভাবে, প্রাইজবন্ড নিরাপদ সঞ্চয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ পুরস্কার জয়ের সংমিশ্রণ হিসেবে কাজ করে, যা বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক পরিকল্পনার সাথে মিল রেখে তাদের বিনিয়োগের অভ্যাসকে উৎসাহিত করে।
৪। সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা:
সরকারের আয় বৃদ্ধি: প্রাইজবন্ড বিক্রির মাধ্যমে সরকার উল্লেখযোগ্য আয় অর্জন করে, যা দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। প্রাইজবন্ড থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব সরকারকে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়। এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে সরকার যেমন জনগণকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করে, তেমনই দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও সহায়তা করে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রচারণার মাধ্যমে প্রাইজবন্ড সাধারণ মানুষের জন্য লাভজনক বিনিয়োগ মাধ্যম হওয়ার পাশাপাশি সরকারি আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
৫। বাজারে নগদ অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধি:
প্রাইজবন্ড ড্র-এর মাধ্যমে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হলে বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বিজয়ীরা এই নগদ অর্থ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেন, যা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। যেমন খুচরা বাজার, সেবা খাত এবং বিনিয়োগে এই অর্থ প্রবাহিত হয়, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে চাঙ্গা করে। ফলে, প্রাইজবন্ড শুধু সঞ্চয়ের মাধ্যম নয়, এটি অর্থনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করে। বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়ক।
৬। বিনিয়োগের বিকল্প তৈরি করা:
প্রাইজবন্ড কেবলমাত্র সঞ্চয়ের মাধ্যম নয়; বরং এটি বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় বিকল্পও হতে পারে। প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো রিটার্ন প্রদান করতে পারে। এটি নিরাপদ এবং নিয়মিত আয় উৎপন্ন করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের পরিবর্তে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ প্রবণতা বাড়ানো সহজ হয়, যা তাদের আর্থিক স্বাধীনতা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করে।
Latest Blog
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আপনি এবং আমার মতো সাধারণ গ্রাহক হিসেবে কল্পনা করুন। যেমন আমরা প্রাইজবন্ড কেনা...
২৬ মে ২০২৪ ২,৫১৪
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল খুবই দুর্বল। দেশকে পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারকে জনগণে...
২৬ মে ২০২৪ ২,০০১
প্রাইজবন্ডের কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। ১. অনিশ্চয়তা: প্রাইজবন্ডের প্রধান নেতিবাচক দিক হলো এর অনিশ্...
১৮ মে ২০২৪ ৩,২৩৯
সারাজীবন কষ্ট করে হয়ত কিছু টাকা জমিয়েছেন। কিন্তু কোথায় টাকা খাটাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ যে কো...
১৬ মে ২০২৪ ২,৯৭৩
৩১শে জুলাই ২০২৪, বুধবার প্রাইজবন্ডের ১১৬তম ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ড্র'তে মোট আশি সিরিজের প্রাইজবন্ডে...
৩১ জুলাই ২০২৪ ৩০,৬৩৪
আসন্ন ১১৬তম ড্র থেকে, যারা বিজয়ী হবেন না তাদেরকেও আমরা ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফাই করা হবে।
০২ জুলাই ২০২৪ ২,৮০৩
আপনার কাছে যদি ১৯৯৫, ২০০০, ২০০২ সালের পুরাতন প্রাইজবন্ড থাকে, হতাশ হবেন না! অনেকেই ভাবতে পারেন এত পু...
১৩ মে ২০২৪ ৩,৮৯২
১০০০ পিস প্রাইজবন্ড কিনেও পুরস্কার না পাওয়া হতাশাজনক হলেও এটি বাস্তব। তি ১০ লাখ প্রাইজবন্ডের মধ্যে...
০৬ জুন ২০২৪ ৩,৬৫৫
প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের ওপর ২০% উৎসে কর প্রযোজ্য। পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ এই কর কেটে রাখেন, ফল...
০২ জুন ২০২৫ ৭৬৯