প্রাইজবন্ড দিবস কি এবং প্রাইজবন্ডের বিশ্বজনীন ইতিহাস।

প্রাইজবন্ড দিবস কি এবং প্রাইজবন্ডের বিশ্বজনীন ইতিহাস।

প্রাইজবন্ড, যা মূলত লটারির মাধ্যমে পুরস্কার প্রদানের একটি সঞ্চয় প্রকল্প, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে উৎসাহিত করতে এবং সরকারের তহবিল সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রবন্ধে আমরা প্রাইজবন্ডের ধারণা, এর ইতিহাস এবং বাংলাদেশে এর প্রচলন নিয়ে আলোচনা করব।

প্রাইজবন্ড দিবস কি?

বাংলাদেশে প্রাইজবন্ড প্রথম যে তারিখে চালু হয়েছিল, সেই তারিখকেই বেসরকারিভাবে প্রাইজবন্ড দিবস বলা হয়। যদিও সরকারিভাবে এই নামে কোনো দিবস চালু করা হয়নি। মজার ব্যাপার হলো, আধুনিক প্রাইজবন্ডের প্রথম ড্র যুক্তরাজ্যে ১৯৫৭ সালের ১লা জুন অনুষ্ঠিত হয়, আবার বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের ১লা জুন প্রাইজবন্ড চালু করা হয়। প্রাইজবন্ডের ক্ষেত্রে ১লা জুনের এই দুই সংশ্লিষ্টতাকে বিবেচনা করে ১লা জুনকেই এই বেসরকারিভাবে প্রাইজবন্ড দিবস হিসেবে ধরা হয়।

প্রাইজবন্ডের বিশ্বজনীন ইতিহাসঃ

প্রাইজবন্ডের ধারণাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে আবির্ভূত হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা এবং একই সাথে লটারির মাধ্যমে পুরস্কার জেতার সুযোগ তৈরি করা। এটি সরকারের জন্য তহবিল সংগ্রহের একটি উপায় হিসেবেও কাজ করেছে।

প্রাইজবন্ডের সূচনাঃ

প্রাইজবন্ডের মতো লটারি বন্ডের ধারণাটি পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে চলে আসছে। জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বা সরকারি অর্থ সংগ্রহের জন্য লটারি ব্যবহারের প্রথম রেকর্ড পাওয়া যায় ১৫শ শতাব্দীর জেনোয়ায়। তবে, আধুনিক প্রাইজবন্ডের ধারণা, যা সরাসরি সরকার কর্তৃক সুদবিহীন সঞ্চয়পত্র হিসেবে পুরস্কারের মাধ্যমে মুনাফা দেয়, তার সূচনা বিংশ শতকে।

•    ভারতীয় উপমহাদেশে (অবিভক্ত ভারতে): ১৯৪৪ সালে অবিভক্ত ভারত সরকার ১০ টাকা ও ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু করে, যা এই অঞ্চলে প্রাইজবন্ডের প্রথম রূপ। এটি মূলত যুদ্ধের তহবিল সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর, পাকিস্তান এবং ভারতের নিজস্ব প্রাইজবন্ড প্রকল্প শুরু হয়।
•    আধুনিক প্রাইজবন্ডের জন্ম: যুক্তরাজ্য: আধুনিক প্রাইজবন্ডের ধারণার জন্ম হয়েছিল যুক্তরাজ্যে, ১৯৫৬ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলান এই ধারণাটি প্রথম চালু করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশের পুনর্গঠনের জন্য অর্থ জোগাড় করা। সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলাও এর একটি লক্ষ্য ছিল। যুক্তরাজ্যে প্রাইজবন্ডগুলো 'প্রাইজবন্ড আর্নি' (Prize Bond Ernie) নামে পরিচিত ছিল, যেখানে 'আর্নি' (ERNIE - Electronic Random Number Indicating Equipment) নামক একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে বিজয়ী নম্বরগুলো নির্বাচিত হতো। ১৯৫৬ সালের ১লা নভেম্বর থেকে এটি বিক্রি শুরু হয় এবং ১৯৫৭ সালের ১লা জুন প্রথম ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এই মডেলটি বিশ্বের অনেক দেশকে প্রাইজবন্ড চালু করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
•    আয়ারল্যান্ড: যুক্তরাজ্যের প্রায় একই সময়ে, অর্থাৎ ১৯৫৭ সালের শুরুর দিকে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রে 'প্রাইজ বন্ডস' চালু হয়।
অন্যান্য দেশে প্রাইজবন্ডের বিস্তার
যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে সাফল্যের পর, বিভিন্ন দেশে প্রাইজবন্ডের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে:
•    পাকিস্তান: ১৯৬০ সালে স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান (SBP) 'ন্যাশনাল প্রাইজবন্ডস' প্রকল্পের অধীনে প্রাইজবন্ড বিক্রি শুরু করে। ১৯৯৯ সালে এই প্রকল্পকে নতুন করে সাজানো হয় এবং ২০১২ সালে আরও নতুন মূল্যমান যোগ করা হয়।
•    বাংলাদেশ:বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালের ১লা জুন প্রাইজবন্ড চালু করে। তৎকালীন গভর্নর আ. ন. হামিদ উল্লাহর স্বাক্ষর করা এই বন্ড প্রাথমিকভাবে ১০ টাকা মূল্যমানে বাজারে আসে। পরবর্তীতে, ১৯৮৫ সালে ৫০ টাকা এবং ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু করা হয়।

উপসংহার:
প্রাইজবন্ড একটি অনন্য সঞ্চয় প্রকল্প যা কেবল আর্থিক সুবিধা প্রদান করে না, বরং পুরস্কার জেতার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা ও আশাও জাগিয়ে তোলে। দীর্ঘ ইতিহাস এবং বিশ্বব্যাপী সফলতার মধ্য দিয়ে প্রাইজবন্ড প্রমাণ করেছে যে এটি সরকার এবং সাধারণ মানুষ উভয়ের জন্যই একটি কার্যকর হাতিয়ার। বাংলাদেশেও এটি ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।

১৪৩ মন্তব্য (০/০) ০১ জুন ২০২৫

Latest Blog

জোড়া বন্ডের সুবিধা অসুবিধা:

জোড়া বন্ডের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, এতে পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা অর্ধেক হয়ে যায়। দুটি বন্ড মিলে একটি ম...

২০ মে ২০২৫ ১৬০

বিজয়ী হলেন যারা ১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্র’তে। Who Won in the 118t...

১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্র-তে ৫১ জন বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জন একই সাথে প্রথ...

০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৮,১৩২

বিজয়ী হলেন যারা ১১৬তম প্রাইজবন্ড ড্র'তে।

একজন প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনজন দ্বিতীয় পুরস্কার, একজন তৃতীয় পুরস্কার, দুইজন চতুর্থ পু...

০১ আগষ্ট ২০২৪ ১৫,১০৩

পুরানো প্রাইজবন্ড: ড্রয়ের পর কি বদলাতে হবে?

একটি প্রচলিত ভুল ধারণা যে প্রতিটি ড্রয়ের পর পুরানো প্রাইজবন্ড অকার্যকর হয়ে যায় এবং নতুন প্রাইজবন্...

২১ অক্টোবর ২০২৪ ১,৮০৩

আমরা কেন প্রাইজবন্ড কিনি?

আমাদের সবার স্বপ্ন একটাই—৬ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার জেতা আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রাইজবন...

১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১,২৬৬

পুরানো প্রাইজবন্ডে ড্র জেতার সম্ভাবনা কতটুকু?

আপনার কাছে যদি ১৯৯৫, ২০০০, ২০০২ সালের পুরাতন প্রাইজবন্ড থাকে, হতাশ হবেন না! অনেকেই ভাবতে পারেন এত পু...

১৩ মে ২০২৪ ৩,১৯৯

১২০তম প্রাইজবন্ড ড্র কবে অনুষ্ঠিত হবে?

১২০তম প্রাইজবন্ডের ড্র ৩১শে জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। এটি ৮২টি সিরিজের মধ্যেই পরিচালিত হ...

০১ জুন ২০২৫ ১৬২

বরিশাল বিভাগের জন্য প্রাইজবন্ড ড্র কবে হবে?

প্রাইজবন্ড ড্র সারা বাংলাদেশের জন্য একই দিনে এবং একই প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রাইজবন্ড ড্র বরিশা...

০৫ জুন ২০২৪ ১,৬৬১

বিজয়ী না হলেও ইমেইলে নোটিফিকেশন পাবেন।

আসন্ন ১১৬তম ড্র থেকে, যারা বিজয়ী হবেন না তাদেরকেও আমরা ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফাই করা হবে।

০২ জুলাই ২০২৪ ২,২৫০

প্রাইজবন্ড সম্পর্কিত ব্লগ সমূহ