
প্রাইজবন্ডের ড্র প্রক্রিয়া কতটা নিরপেক্ষ?
বাংলাদেশে প্রাইজবন্ড ড্রর কার্যক্রম নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে কিছু প্রশ্ন দেখা যায়। এই প্রশ্নগুলো ড্র প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এক ধরনের সংশয় তৈরি করে। কিন্তু কেন এমন সংশয় তৈরি হয়? আসলেই কি এর পেছনে কোনো কারণ আছে? এমন কোনো ঘটনা কি ঘটেছে যা এই সন্দেহকে সমর্থন করে?
"সাধারণ মানুষ" ও তাদের প্রভাবঃ
সাধারণ মানুষ বলতে একটি নির্দিষ্ট অংশকে বোঝায়, যারা কোনো কিছুর গভীরে প্রবেশ না করে বা কোনো বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ না করেই তাদের ব্যক্তিগত অনুমান বা ধারণাকে সত্য বলে প্রচার করে। প্রাইজবন্ড ড্রর ক্ষেত্রেও এই অংশটি তাদের অসম্পূর্ণ ধারণাগুলোকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সত্য হিসেবে প্রকাশ করে। এই ধরনের তথ্যের ব্যাপক প্রচার এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তা বাজারে একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণায় পরিণত হয়।
যারা এই ধরনের তথ্য ছড়ায়, তাদের অনেকেই প্রাইজবন্ড ড্র অনুষ্ঠানে কখনও উপস্থিত থাকে না। অথবা তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা অল্প সংখ্যক (যেমন পাঁচ বা দশটি) প্রাইজবন্ড কিনে প্রথম পুরস্কার পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। প্রাইজবন্ডের পুরস্কার পাওয়া সহজ কাজ নয়। যেখানে প্রায় ২২ হাজার প্রাইজবন্ড নম্বরের মধ্যে মাত্র একটি নম্বর পুরস্কার পায়, সেখানে অল্প কয়েকটি নম্বরের মধ্যে পুরস্কার জেতা কেবল ভাগ্যের ব্যাপার। অল্প সংখ্যক প্রাইজবন্ড কিনে পুরস্কার জেতার স্বপ্ন দেখা মানুষের সংখ্যাই বেশি। পুরস্কার না পেয়ে তাদের মনে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়, যা থেকে তাদের ধারণা হয় যে প্রাইজবন্ড ড্রতে অনিয়ম হয়। এই অংশের মানুষের সংখ্যা এত বেশি যে তাদের সম্মিলিত বক্তব্য শুনে অন্যরা মনে করে, প্রাইজবন্ড ড্রর স্বচ্ছতা নিয়ে সত্যিই প্রশ্ন আছে।
কর্তৃপক্ষের অবস্থান ও সরাসরি সম্প্রচারের প্রভাবঃ
জনমনে এই সন্দেহ তৈরি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো প্রাইজবন্ড কর্তৃপক্ষের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান। এই অবস্থানটি হলো প্রাইজবন্ড ড্র অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতে না দেওয়া। কর্তৃপক্ষ নিজেরাও সরাসরি সম্প্রচার করে না এবং কোনো সংবাদকর্মী বা অন্য কাউকে এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেয় না। সরাসরি সম্প্রচার না করার এই অবস্থানই জনমনে প্রাইজবন্ড ড্রর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতে সাহায্য করে।
তবে, যারা প্রাইজবন্ড ড্র অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন, তারা জানেন যে এই ড্র প্রক্রিয়াটি একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালিত হয়। এখানে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। এই প্রক্রিয়ায় ৬টি ড্রাম ঘোরানো হয় এবং প্রতিটি ড্রাম থেকে একটি করে সংখ্যা তোলা হয়। এই ৬টি সংখ্যা মিলে একটি নম্বর তৈরি হয়, যা একটি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়। এইভাবে ৪৬ বার ড্রাম ঘুরিয়ে ৪৬টি পুরস্কার নির্বাচন করা হয়। উপস্থিত দর্শক এবং গণমাধ্যম কর্মীরা পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পান।
উপসংহারঃ
শেষ কথা হলো, প্রাইজবন্ডের ড্র সরাসরি সম্প্রচার করা হোক বা না হোক, ড্র অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী এবং সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকে। এই উপস্থিতি ড্র প্রক্রিয়ার একটি পর্যায়ক্রমিক তদারকি নিশ্চিত করে। তাই, যে যাই বলুক না কেন, প্রাইজবন্ড ড্রতে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অস্বচ্ছতা বলে কিছু নেই। এই প্রক্রিয়াটি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সম্পন্ন হয়।
Latest Blog
একটি নাম্বার একবার বিজয়ী হওয়ার পর কিভাবে আবার বিজয়ী হয়? পরের ড্রতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে তো আর...
২৯ মে ২০২৪ ২,৮৭৭
সরকার পতনের কারণে প্রাইজবন্ডের কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে বা কিছু নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে।...
০৮ আগষ্ট ২০২৪ ২,৮৩৪
প্রাইজবন্ডের ড্র-তে কোন নাম্বারগুলো জেতার সম্ভাবনা খুবই কম, তা খুঁজে বের করতে অনেকেই আগ্রহী। কিন্তু...
২২ আগষ্ট ২০২৫ ১,০২৫
শ্রোতাদের কথা: আমরা আমাদের গ্রাহকদের মতামতকে মূল্য দিই! ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম...
২৮ অক্টোবর ২০২১ ৩,৩৭৫
দেখতে দেখতে আমরা সাত বছর পার করে অষ্টম বছরে পা রাখছি। আমাদের পথচলার শুরুটা ছিল দেশের একটি নির্দিষ্ট...
২২ আগষ্ট ২০২৫ ৩,১৯০
বাংলাদেশের প্রথম প্রাইজবন্ড ১৯৭৪ সালে ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানে চালু হয়। ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যের প্র...
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩৮
মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি ছাড়া অন্য কোন ঝুঁকি নাই প্রাইজবন্ডে। সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও সমর্থিত হওয়ায়...
২৪ জুন ২০২৪ ২,৬৭৪
প্রাইজবন্ডকে লিকুইড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। তাই প্রাইজবন্ডের মালিকেরা এক ধরনের স্বাধীনত...
২৯ অক্টোবর ২০২৪ ২,৫১৮
প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের ওপর ২০% উৎসে কর প্রযোজ্য। পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ এই কর কেটে রাখেন, ফল...
০২ জুন ২০২৫ ১,৩৯২