
প্রাইজবন্ড কেনার সময় ব্যাংকের রেজিস্টারে নাম এন্ট্রি করা হয় না কেন?
কখনো কি আপনি ভেবে দেখেছেন, প্রাইজবন্ড কেনার সময় ব্যাংকের রেজিস্টারে আমাদের নাম লিখে রাখে না কেন? এর পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
প্রাইজবন্ড হলো একটি “বেয়ারার বন্ড”, যার মানে, যে ব্যক্তির কাছে প্রাইজবন্ড থাকবে, সেই ব্যক্তিই এর মালিক। এটি টাকার মতোই কাজ করে, যেমন, আপনার কাছে যদি ১০০ টাকার নোট থাকে, সেটির মালিক আপনি, এর মালিকানা প্রমাণের জন্য টাকার নাম্বার সহ আপনার নাম ঠিকানা কোন রেজিস্টারে লিখতে হয় না। প্রাইজবন্ডও তেমনি যার কাছে প্রাইজবন্ড থাকবে, তিনিই এর মালিকানা ভোগ করবেন এবং পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাই প্রাইজবন্ডের মালিকানার তথ্য ব্যাংকের রেজিস্টারে এন্ট্রি করার প্রয়োজন হয় না।
প্রাইজবন্ড, শেয়ার বা সঞ্চয়পত্রের মতো নয়, যেখানে গ্রাহকের নাম এবং পরিচয় নিবন্ধন করার প্রয়োজন থাকে। ফলে, প্রাইজবন্ড কেনার সময় নাম নিবন্ধনের ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত এবং সহজে ইস্যু করা যায়। আন্তর্জাতিকভাবে এই ধরনের বেয়ারার বন্ডের ক্ষেত্রে নাম নিবন্ধনের প্রচলন নেই, এবং বাংলাদেশেও এই ব্যবস্থাই অনুসরণ করা হয়।
প্রাইজবন্ডকে লিকুইড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। তাই প্রাইজবন্ডের মালিকেরা এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে থাকেন। যেকোনো সময় এটি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারেন, যেমনটি টাকার ক্ষেত্রে হয়। প্রাইজবন্ড কেনার সময় যেমন নাম রেজিস্ট্রি করতে হয় না, ঠিক তেমনি হাত বদলের সময়ও নাম পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না।
এই প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ছে। ছোটবেলায় আমরা অনেকেই গল্পটি পড়েছি। বনের রাজা সিংহ।
এক বনে একটা ভীষণ শক্তিশালী সিংহ বাস করত। সে রাজার মতো জঙ্গলের সব প্রাণীর উপর রাজত্ব করত। সারাদিন ধরে সে অন্য প্রাণীদের পেছনে ছুটত, ধরে ধরে খেত। এই ভয়ে সব প্রাণীরা সারাক্ষণ ভীত থাকত। তারা আর স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়াতে পারত না, ঘুমাতে পারত না। সিংহের ভয়ে সবসময় একটা আতঙ্ক ছিল তাদের মনে।
একদিন সব প্রাণী মিলে সিংহের কাছে গিয়ে একটা অদ্ভুত প্রস্তাব রাখল। তারা বলল, “মহারাজ, আপনাকে আর আমাদের ধরে খেতে হবে না। আমরা প্রতিদিন আপনার কাছে একজন করে যাব, আপনি আরাম করে খেতে পারবেন। কিন্তু আর আমাদের ভয় দেখাবেন না।” সিংহ এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। এইভাবে সব প্রাণীরা সিংহের ভয় থেকে মুক্ত হয়ে গেল এবং প্রতিদিন একটি করে প্রাণী সিংহের দরবারে আসতে শুরু করলো।
প্রাইজবন্ডের ক্ষেত্রেও একই ধরনের দায়িত্ব গ্রাহকের উপর ন্যস্ত থাকে। যার কাছে প্রাইজবন্ড থাকবে, তিনি নিজ দায়িত্বে এটি সংরক্ষণ করবেন এবং নিয়মিত ড্র রেজাল্ট পরীক্ষা করবেন। বিজয়ী হলে, তিনি নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে পুরস্কারের জন্য দাবি করবেন। এই ক্ষেত্রে সিংহ হলো বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বনের প্রাণী হলাম আমরা প্রাইজবন্ডের গ্রাহক।
প্রাইজবন্ড আপনার কাছে একটি মূল্যবান জিনিস। তাই, এটি নিরাপদে রাখুন। যদি আপনি বিজয়ী হন, তাহলে নিজেই ব্যাংকে গিয়ে পুরস্কার নিতে হবে।
Latest Blog
শুধু যাদের সাথে আপনার জোড়া মিলবে তারাই আপনার ফোন নাম্বার দেখতে পাবে—অন্য কেউ দেখতে পাবে না। যদি তারা...
০৯ নভেম্বর ২০২৪ ১,৬৩১
আধুনিক প্রাইজবন্ডের প্রথম ড্র যুক্তরাজ্যে ১৯৫৭ সালের ১লা জুন অনুষ্ঠিত হয়, আবার বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের...
০১ জুন ২০২৫ ৮৩
১১৬তম প্রাইজবন্ড ড্রতে দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন ঢাকার ধামরাইয়ে জন্ম নেওয়া এক সাধারণ যুবক ফিরো...
০৩ আগষ্ট ২০২৪ ৩,৭৯৫
১৯৯৫ সালে প্রাইজবন্ড চালু হলেও, গ্রাহকবান্ধব সংস্কারের অভাবে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। গ্রাহকদের ভোগান্ত...
২২ মে ২০২৪ ৩,৩১৭
প্রাইজবন্ডের কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। ১. অনিশ্চয়তা: প্রাইজবন্ডের প্রধান নেতিবাচক দিক হলো এর অনিশ্...
১৮ মে ২০২৪ ২,৬০৮
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আপনি এবং আমার মতো সাধারণ গ্রাহক হিসেবে কল্পনা করুন। যেমন আমরা প্রাইজবন্ড কেনা...
২৬ মে ২০২৪ ১,৯০৫
একজন প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনজন দ্বিতীয় পুরস্কার, একজন তৃতীয় পুরস্কার, দুইজন চতুর্থ পু...
০১ আগষ্ট ২০২৪ ১৫,০৬৫
প্রাইজবন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক নয়। যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক নগদ টাকা দিয়...
১৪ মে ২০২৪ ১,৭৮৫
একটি প্রচলিত ভুল ধারণা যে প্রতিটি ড্রয়ের পর পুরানো প্রাইজবন্ড অকার্যকর হয়ে যায় এবং নতুন প্রাইজবন্...
২১ অক্টোবর ২০২৪ ১,৭৯০