ড্রর আগের দিন কেনা প্রাইজবন্ড কি ড্র’তে আসে?  

ড্রর আগের দিন কেনা প্রাইজবন্ড কি ড্র’তে আসে?  

অনেকবার আমরা এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি এবং বারবার এককভাবে উত্তর দেওয়া যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও অপ্রত্যাশিত। তাই আপনারা যাঁরা প্রাইজবন্ড নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন করেন, তাদের জন্য আমরা গুছিয়ে এবং বিশদভাবে এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করছি।

১৯৯৫ সাল থেকে যত প্রাইজবন্ড বাজারে এসেছে, সবগুলোই এখনও কার্যকর অবস্থায় রয়েছে এবং কোনো প্রাইজবন্ডই বাতিল করা হয়নি। তবে কার্যকর থাকলেই যে সব প্রাইজবন্ড প্রতিটি ড্রতে অংশগ্রহণ করবে, তা নয়। আপনার কেনা প্রাইজবন্ড নির্দিষ্ট ড্রতে অংশ নেবে কি না, তা প্রধানত দুইটি বিষয়ে নির্ভর করে। প্রথমত, প্রাইজবন্ডের বিক্রয়ের তারিখ, এবং দ্বিতীয়ত, প্রাইজবন্ডটির সিরিজ।

প্রথম অংশে আমরা প্রাইজবন্ড বিক্রয়ের তারিখ নিয়ে আলোচনা করছি।
প্রাইজবন্ডকে অনেকটা টাকার বিকল্প হিসেবে ধরা হয়, কারণ এটি কিনে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করা হলেও পরবর্তীতে এটি বিক্রি করলে আপনি একই পরিমাণ অর্থই ফিরে পাবেন। প্রাইজবন্ড মূলত সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে ছাপানো হয় এবং এর সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে। ছাপানোর পর, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে বিতরণ করা হয়। প্রথমবার যেদিন নতুন প্রাইজবন্ড বিক্রয় করা হয়, সেদিনের তারিখ সম্বলিত একটি সিল প্রাইজবন্ডের গায়ে মুদ্রিত থাকে। এই তারিখটি প্রাইজবন্ডের বৈধতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইজবন্ডে যে ড্র হয়, তাতে অংশগ্রহণ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে—বিক্রয়ের তারিখ থেকে অন্তত দুই মাস পার হতে হবে। এর অর্থ হলো, প্রাইজবন্ডটি ড্রর আওতায় আসার আগে কমপক্ষে দুই মাস বাজারে থাকা আবশ্যক। এটি একটি নতুন প্রাইজবন্ড হলেও প্রথম ক্রেতার কাছে যাওয়ার পর থেকে দুই মাস পার না হলে, সেটি কোনও ড্রতে অংশ নিতে পারবে না।

প্রাইজবন্ড একবার হাতবদল হওয়ার পর যেহেতু তার সিলের তারিখ পরিবর্তন হয় না, তাই আপনি যেদিন এটি কিনছেন, সেটি ড্রর আগের দিন হলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ এর মূল বিবেচ্য বিষয় হলো প্রাথমিক বিক্রয় সিলের তারিখ। তাই, যখন একটি প্রাইজবন্ড আপনার হাতে আসবে, তখন সেটি ইতোমধ্যেই দুই মাসের শর্ত পূরণ করেছে ধরে নেওয়া হয়। সুতরাং, আপনার প্রাইজবন্ড ড্রতে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, তা নির্ভর করছে প্রাথমিক সিল তারিখ এবং দুই মাসের শর্ত পূরণ করার ওপর। 

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত প্রাইজবন্ড দুই ধরনের হতে পারে—নতুন এবং পুরাতন। নতুন প্রাইজবন্ডগুলি প্রথমবারের মতো বিক্রি হলে সেগুলোর বিক্রয়ের তারিখ থেকে দুই মাস পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো ড্রতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় না। অর্থাৎ, প্রাইজবন্ডটি কার্যকর হতে দুই মাস অপেক্ষা করতে হয়, যা অনেক সময় একটি ধাঁধার মতো মনে হতে পারে। নতুন প্রাইজবন্ড কেনার পর যদি ড্রয়ের মধ্যে দুই মাস পূর্ণ না হয়, তবে তা ড্রতে অন্তর্ভুক্ত হবে না, যা অনেক ক্রেতার জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

অন্যদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ডাকঘর সাধারণত পুরোনো এবং হাতবদল হওয়া প্রাইজবন্ড বিক্রয় করে থাকে। এই ধরনের প্রাইজবন্ড ইতিমধ্যে দুই মাসের সীমা পার করে দিয়েছে এবং ড্রতে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক বা পোস্ট অফিস থেকে প্রাইজবন্ড কিনলে ক্রেতার এই দুই মাসের অপেক্ষার ধাঁধায় পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে আপনি যদি বেশী পরিমাণ, যেমন এক লাখ বা দুই লাখ টাকার প্রাইজবন্ড একসাথে কিনতে চান, তাহলে এক ব্যাংক থেকেই সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রাইজবন্ড সংগ্রহ করা বেশ কঠিন হতে পারে। সাধারণত, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বেশী পরিমাণ প্রাইজবন্ড মজুদ থাকে না, এবং একই ব্যাংকে সেই পরিমাণে প্রাইজবন্ড পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। এ অবস্থায় আপনাকে একাধিক ব্যাংকে গিয়ে প্রাইজবন্ড সংগ্রহ করতে হবে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকে এ সমস্যাটি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেকোনো দিন, আপনার ইচ্ছেমতো বড় পরিমাণ প্রাইজবন্ড কেনা সম্ভব, কারণ সেখানে পর্যাপ্ত স্টক থাকে।

তাহলে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আপনার: আপনি চাইলে নিজের সুবিধামতো কাছাকাছি বাণিজ্যিক ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতে পারেন, আবার সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকেও যেতে পারেন যেখানে বেশী পরিমাণে প্রাইজবন্ড একসাথে কেনার সুযোগ পাবেন।

আলোচনার দ্বিতীয় অংশ হলো সিরিজঃ
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিক্রয়কৃত সকল সিরিজের প্রাইজবন্ড ড্রতে অংশগ্রহণ করে না, বিশেষত নতুন সিরিজগুলোর ক্ষেত্রে। প্রতিটি সিরিজে সাধারণত ১০ লাখ প্রাইজবন্ড থাকে, এবং একটি সিরিজের সকল প্রাইজবন্ড সম্পূর্ণ বিক্রয় না হলে তা ড্রতে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে না। এই প্রক্রিয়ায় কখনও দুই মাস বা কখনও চার মাসও লাগতে পারে।

ধরুন, একটি নতুন সিরিজের প্রাইজবন্ড বিক্রয় শুরু হয়েছে ড্রয়ের মাত্র এক মাস আগে। এমন পরিস্থিতিতে ওই সিরিজের ১০ লাখ প্রাইজবন্ড বিক্রয় সম্পূর্ণ হওয়া স্বাভাবিকভাবেই অসম্ভব। কারণ মাত্র এক মাসের মধ্যে পুরো সিরিজ বিক্রয় শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়া ড্রতে অংশ নিতে দুই মাসের একটি বাধ্যতামূলক শর্তও আছে। এর মানে, ড্রর দিন যদি দুই মাস পূর্ণ না হয়, তবে ওই সিরিজের প্রাইজবন্ড ড্রতে অংশ নিতে পারবে না। ফলে, ওই সিরিজের প্রাইজবন্ডের জন্য পরবর্তী ড্র পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যা প্রায় তিন মাস পর অনুষ্ঠিত হবে। তাহলে ড্রর জন্য ৪মাস অপেক্ষা করতে হলো।

আমাদের পরামর্শ:
১। সীমিত সংখ্যক প্রাইজবন্ড (১০০/২০০/৫০০) কিনতে চাইলে: আপনি যদি অল্প সংখ্যক প্রাইজবন্ড কিনতে চান, তাহলে আপনার নিকটস্থ পোস্ট অফিস বা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করাই হবে সবচেয়ে সুবিধাজনক। পোস্ট অফিস বা ব্যাংকের ছোট শাখাগুলোতে সীমিত সংখ্যক প্রাইজবন্ড পাওয়া যায়, এবং সেখানে সাধারণত পুরোনো প্রাইজবন্ড পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই নিকটস্থ শাখা থেকে ঘুরে ঘুরে কিনে আপনার প্রয়োজনীয় প্রাইজবন্ড সংগ্রহ করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি অপেক্ষাকৃত পুরোনো এবং ড্রয়ের জন্য প্রস্তুত প্রাইজবন্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

২। বেশী পরিমাণ প্রাইজবন্ড (১ লাখ বা তার বেশি) কিনতে চাইলে: আপনার যদি অনেক বেশী পরিমাণে, যেমন এক লাখ বা তারও বেশি মূল্যের প্রাইজবন্ড কেনার ইচ্ছা থাকে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোনো শাখায় সরাসরি চলে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাইজবন্ড মজুদ থাকে, এবং একসাথে বড় পরিমাণে কেনার ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে থাকে। এছাড়া, ড্রর পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুরোনো প্রাইজবন্ড কেনার সুবিধাও পাওয়া যায়, যা ড্রয়ের জন্য অপেক্ষার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়।

বিশেষ নোট: বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন প্রাইজবন্ড কিনলে সাধারণত তাৎক্ষণিকভাবে ড্রয়ের জন্য বিবেচনা করা হয় না। নতুন প্রাইজবন্ড কেনার পরে সাধারণত দুই মাস অপেক্ষার সময় থাকে, তাই পুরোনো প্রাইজবন্ড সংগ্রহের জন্য ড্রর পর কেনার কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।

২,২০১ মন্তব্য (০/০) ২৬ অক্টোবর ২০২৪

Latest Blog

প্রথম পুরস্কার পেয়েও তুলতে ব্যর্থ হলেন যেসব সৌভাগ্যবান বিজয়ী...

প্রাইজবন্ড, অনেকের কাছেই স্বপ্নের টিকিট। এক টিকিটে লুকিয়ে থাকে ৬ লাখ টাকার স্বপ্ন। কিন্তু বিশ্বাস ক...

২২ অক্টোবর ২০২৪ ৩,৩১৭

প্রাইজবন্ড কিনলে কতদিন পর জিতবেন?

প্রাইজবন্ডে যদিও পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম, তবুও মানুষ এই প্রাইজবন্ড কেনার মাধ্যমে নি...

২৯ মে ২০২৪ ৪,৩৮৪

কেন কিনবেন প্রাইজবন্ড?

সারাজীবন কষ্ট করে হয়ত কিছু টাকা জমিয়েছেন। কিন্তু কোথায় টাকা খাটাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ যে কো...

১৬ মে ২০২৪ ২,৪৩৫

প্রাইজবন্ড কোথায় ছাপানো হয়?

বাংলাদেশের প্রাইজবন্ড ঢাকার গাজীপুরে অবস্থিত সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড (এসপিসিব...

২৮ মে ২০২৪ ১,৭০৯

প্রাইজবন্ড কেনার সময় ব্যাংকের রেজিস্টারে নাম এন্ট্রি করা হয়...

প্রাইজবন্ডকে লিকুইড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। তাই প্রাইজবন্ডের মালিকেরা এক ধরনের স্বাধীনত...

২৯ অক্টোবর ২০২৪ ১,৬২৪

১১৬তম প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৩১শে জুলাই ২০২৪, বুধবার প্রাইজবন্ডের ১১৬তম ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ড্র'তে মোট আশি সিরিজের প্রাইজবন্ডে...

৩১ জুলাই ২০২৪ ২৯,৫৭১

আমাদের প্যাকেজের মেয়াদ লাইফটাইম কেন? Why is our package val...

আমরা বিশ্বাস করি, একবার যদি আপনি আমাদের সার্ভিস ব্যবহার করে সন্তুষ্ট হন, তাহলে আপনিই কিন্তু নিঃস্বার...

৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ৯৪২

প্রাইজবন্ডের জনপ্রিয়তার পতনের কারণ?

প্রাইজবন্ড একসময় বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগের বিকল্প ছিল। এক দশক আগেও প্রাইজবন্ড উপহার ও পুরস...

২০ মে ২০২৪ ১,৭১৮

বিজয়ী না হলেও ইমেইলে নোটিফিকেশন পাবেন।

আসন্ন ১১৬তম ড্র থেকে, যারা বিজয়ী হবেন না তাদেরকেও আমরা ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফাই করা হবে।

০২ জুলাই ২০২৪ ২,৩৬৩

প্রাইজবন্ড সম্পর্কিত ব্লগ সমূহ