কোটি টাকার প্রাইজবন্ড পুরস্কার, নেই কোনো দাবিদার।

কোটি টাকার প্রাইজবন্ড পুরস্কার, নেই কোনো দাবিদার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাইজবন্ড একটি দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় সঞ্চয় ও লটারি প্রকল্প যা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের আকর্ষণ করে। আকর্ষণীয় পুরস্কার জেতার সুযোগ এবং সঞ্চয়ের সুযোগ একসাথে পাওয়ার কারণে অনেকেই এটি পছন্দ করেন।

তবে, একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার প্রাইজবন্ড পুরস্কারের কোনো দাবিদার থাকে না। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার পুরস্কার অদাবি ‍থাকা অবস্থায় ২০২৪ সালেও অনেক টাকার পুরস্কার অদাবি ‍থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অদাবি থাকার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

১। টাকার অবমূল্যায়নঃ
১৯৯৫ সালে ১০০ টাকার প্রাইজবন্ড প্রবর্তনের পর ৫ম পুরস্কারের মূল্য ছিল দশ হাজার টাকা, এবং এখনো এই মূল্যমান দশ হাজার টাকাতেই রয়ে গেছে। কিন্তু ১৯৯৫ সালে দশ হাজার টাকার যে ক্রয়ক্ষমতা ছিল, ২৯ বছর পরে তা অনেক কমে গেছে। এই কারণেও অনেকেই পুরস্কার তুলতে আগ্রহবোধ করেন না।

২। পুরস্কার দাবি শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকেই সীমাবদ্ধ রাখাঃ
পুরস্কার দাবির জন্য শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখায় যাওয়া বাধ্যতামূলক, যা দেশের সকল গ্রাহকের জন্য সুবিধাজনক নয়, বিশেষ করে জেলা, থানা ও মফস্বল এলাকার বাসিন্দাদের জন্য। দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে ব্যাংকে যেতে হওয়ায় এবং জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হওয়ায় অনেক গ্রাহক হয়রানি মনে করেন এবং পুরস্কার দাবি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

৩। পুরস্কার দাবির প্রক্রিয়ার জটিলতা
অনেক গ্রাহক পুরস্কার দাবির প্রক্রিয়াকে বেশ জটিল মনে করেন। বিশেষ করে গেজেটেড অফিসার দিয়ে কাগজপত্র সত্যায়িত করার নিয়মটি এই ডিজিটাল যুগে বেশ অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। অনেক গ্রাহক এই প্রক্রিয়াটিকে হয়রানির অংশ হিসেবে দেখেন এবং পুরস্কার নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

৪। সরকারিভাবে গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণের অভাবঃ
সরকারিভাবে গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে, প্রাইজবন্ড জিতলেও গ্রাহকরা বিজয়ী হওয়ার খবর জানতে পারেন না। প্রাইভেট সেক্টরে এই ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও, বাৎসরিক বা লাইফটাইম চার্জ দিতে হওয়ায় অনেকেই এই সেবা গ্রহণে আগ্রহী হন না। এছাড়াও, অনেক গ্রাহকই প্রাইভেট সেক্টরের প্রতি আস্থা রাখতে পারেন না।

৫। প্রাইজবন্ড টিকিট হারিয়ে ফেলা:
প্রাইজবন্ড একটি কাগজের টিকিট। অনেকেই টিকিট কেনার পর কোথায় রেখেছেন ভুলে যান অথবা হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে, তারা পুরস্কারটি দাবি করতে পারেন না।

৬। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি না করা:
প্রাইজবন্ডের পুরস্কার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি করতে হয়। সাধারণত প্রতি তিন মাস পর পর ড্র অনুষ্ঠিত হয়। তবে, পুরস্কার দাবির সময়সীমা ২ বছর। অনেকেই পুরস্কার জিতলেও সময়মতো দাবি করতে না পারার কারণে পুরস্কার তুলতে পারেন না। ফলে পুরস্কারটি অদাবি থেকে যায়।

৭। অসচেতনতা অভাব:
অনেকেই প্রাইজবন্ড ড্রয়ের ফলাফল নিয়মিতভাবে চেক করেন না। ফলাফল না জানার কারণে তারা তাদের পুরস্কারটি দাবি করতে পারেন না।

 ৮। তথ্যের অভাব:
প্রাইজবন্ড সম্পর্কে অনেক মানুষ পর্যাপ্ত তথ্য জানেন না। অনেকেই জানেন না কিভাবে পুরস্কার দাবি করতে হয়, কোথায় যোগাযোগ করতে হয়, এবং কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন। তথ্যের অভাবে তারা পুরস্কার দাবির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হন। 

শেষ কথা:
বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে প্রাইজবন্ডের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাইজবন্ডের কোটি কোটি টাকার পুরস্কার অদাবি হয়ে যায়, যা প্রাইজবন্ডের উদ্দেশ্য সফলভাবে বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে। এই সমস্যা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রাইজবন্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ানো এবং অদাবি হয়ে যাওয়া পুরস্কারের পরিমাণ কমানো সম্ভব।

৩,৬৮০ মন্তব্য (০/০) ০৮ জুলাই ২০২৪

Latest Blog

প্রাইজবন্ড ড্র ২০২৫।। Prize Bond Draw 2025
প্রাইজবন্ড ড্র ২০২৫।। Prize Bond Draw 2025

১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্র ২রা ফেব্রুয়ারি, রবিবার, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।

০২ জানুয়ারী ২০২৫ ৮০,৫৮৭

ব্যাংকে থাকা প্রাইজবন্ড কি ড্র'র আওতায় আসে?
ব্যাংকে থাকা প্রাইজবন্ড কি ড্র'র আওতায় আসে?

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আপনি এবং আমার মতো সাধারণ গ্রাহক হিসেবে কল্পনা করুন। যেমন আমরা প্রাইজবন্ড কেনা...

২৬ মে ২০২৪ ৩,১১৭

বাংলাদেশে কোটার সাথে প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের সম্পর্ক
বাংলাদেশে কোটার সাথে প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের সম্পর্ক

প্রাইজবন্ড হলো একটি সঞ্চয় প্রকল্প, যেখানে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর লটারির মাধ্যমে পুরস্ক...

২৭ জুলাই ২০২৪ ২,৫৯৪

বিজয়ী না হলেও ইমেইলে নোটিফিকেশন পাবেন।
বিজয়ী না হলেও ইমেইলে নোটিফিকেশন পাবেন।

আসন্ন ১১৬তম ড্র থেকে, যারা বিজয়ী হবেন না তাদেরকেও আমরা ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফাই করা হবে।

০২ জুলাই ২০২৪ ৩,২১৬

প্রথম পুরস্কার হাফিজুর রহমানের হাতে ১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্র।
প্রথম পুরস্কার হাফিজুর রহমানের হাতে ১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্র।

১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্রতে তিনি প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। তার প্রাইজবন্ডের নম্বর হল কঙ ০৬০৩৯০৮।

০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৭,৭৬৬

প্রাইজবন্ডের প্রচলন কেন হয়েছিল?
প্রাইজবন্ডের প্রচলন কেন হয়েছিল?

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল খুবই দুর্বল। দেশকে পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারকে জনগণে...

২৬ মে ২০২৪ ২,৪৫১

১১৬তম প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১১৬তম প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৩১শে জুলাই ২০২৪, বুধবার প্রাইজবন্ডের ১১৬তম ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ড্র'তে মোট আশি সিরিজের প্রাইজবন্ডে...

৩১ জুলাই ২০২৪ ৩১,৮৫২

সার্ভিস চার্জের মেয়াদ "লাইফটাইম" – এর প্রকৃত অর্থ কী?
সার্ভিস চার্জের মেয়াদ "লাইফটাইম" – এর প্রকৃত অর্থ কী?

লাইফটাইম মেয়াদ" মানে এটি চিরস্থায়ী নয়, বরং এটি নির্ভর করে সার্ভিসের অস্তিত্ব এবং আপনার সক্রিয় ব্যবহা...

০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১,৫৭১

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাইজবন্ডের পুরস্কার অন্য কেহ উত্তোলন করেছে কিনা, কিভাবে বুঝবেন?
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাইজবন্ডের পুরস্কার অন্য কেহ উত্তোলন করেছে...

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাইজবন্ড উলটো করে ধরলে, যদি কেউ পূর্বে টাকা উত্তোলন করে থাকে, সেখানে একটি সিল দেওয়...

১২ অক্টোবর ২০২৪ ৩,৩১৩

প্রাইজবন্ড সম্পর্কিত ব্লগ সমূহ