প্রবাসীরা বিদেশ থেকে কিভাবে প্রাইজবন্ড কিনবেন?
বিদেশে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী আছেন, যারা দেশের সাথে আর্থিকভাবে যুক্ত থাকতে চান বা নিরাপদ কোনো বিনিয়োগ খুঁজে থাকেন। তাদের জন্য প্রাইজবন্ড একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে। তবে সঞ্চয়পত্রের মতো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এটি সরাসরি বিদেশ থেকে কেনা সম্ভব নয়। প্রাইজবন্ড কেনার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়, যা একেবারেই আলাদা।
প্রাইজবন্ড কী এবং কেন এটি জনপ্রিয়?
প্রাইজবন্ড হলো বাংলাদেশ সরকারের ইস্যুকৃত একটি বিশেষ ধরনের সঞ্চয়পত্র, যা লটারিভিত্তিক। প্রতিটি প্রাইজবন্ডের মূল্যমান ১০০ টাকা। এটি প্রবাসীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়, কারণ এটি একটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ। এতে কোনো সুদ বা মুনাফা না থাকলেও মূল টাকা হারানোর কোনো ভয় থাকে না। প্রাইজবন্ডের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর লটারি ব্যবস্থা।
পুরস্কার কাঠামো ও ড্র-এর নিয়ম
প্রাইজবন্ডের ড্র প্রতি তিন মাস অন্তর, অর্থাৎ বছরে চারবার—৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩০ জুলাই এবং ৩১ অক্টোবর—অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ড্র-তে পুরস্কারের একটি নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে। যা সকল সিরিজের জন্যই প্রযোজ্য।
⭐ প্রথম পুরস্কার: ১টি - ৬,০০,০০০ টাকা
⭐ দ্বিতীয় পুরস্কার: ১টি - ৩,২৫,০০০ টাকা
⭐ তৃতীয় পুরস্কার: ২টি - ১,০০,০০০ টাকা করে
⭐ চতুর্থ পুরস্কার: ২টি - ৫০,০০০ টাকা করে
⭐ পঞ্চম পুরস্কার: ৪০টি - ১০,০০০ টাকা করে
প্রবাসীদের জন্য প্রাইজবন্ড কেনার চ্যালেঞ্জ
যদিও দেশে বসবাসকারীরা সহজেই নিকটস্থ ব্যানিজ্যিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো বা পোস্ট অফিস থেকে প্রাইজবন্ড কিনতে পারেন, তবে প্রবাসীদের জন্য পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।
বর্তমানে, বিদেশ থেকে সরাসরি অনলাইনে প্রাইজবন্ড কেনার কোনো ব্যবস্থা নেই। এর কারণ, প্রাইজবন্ডের লেনদেন এখনো কাগজের উপর নির্ভরশীল এবং নগদ টাকার মাধ্যমে এটি ইস্যু করা হয়।
কোনো অফিশিয়াল এজেন্ট বা আন্তর্জাতিক চ্যানেলও নেই, যার মাধ্যমে একজন প্রবাসীরা সরাসরি বন্ড কিনতে পারবেন। এটি একটি অভ্যন্তরীণ আর্থিক পণ্য হিসেবে পরিচালিত হয়।
প্রাইজবন্ড কেনার জন্য কোনো ধরনের আবেদনপত্র বা পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার দরকার হয় না। এটি সম্পূর্ণভাবে নগদ লেনদেন নির্ভর। ফলস্বরূপ, দূর থেকে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে প্রাইজবন্ড কেনা সম্ভব নয়।
এই সীমাবদ্ধতাগুলোর কারণে, প্রবাসীরা ব্যক্তিগতভাবে প্রাইজবন্ড কিনতে পারেন না।
তাহলে – কিভাবে প্রবাসীরা প্রাইজবন্ড কিনতে পারবেন?
যেহেতু বিদেশ থেকে সরাসরি কেনা যায় না, তাই প্রবাসীদের জন্য একমাত্র কার্যকর সমাধান হলো বাংলাদেশে অবস্থানরত কোনো বিশ্বস্ত আত্মীয় বা বন্ধুর সাহায্য নেওয়া।
ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া:
প্রবাসী তার বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশে থাকা আত্মীয় বা বন্ধুর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাবেন। এই লেনদেন বৈধ রেমিট্যান্স চ্যানেলের মাধ্যমে করলে তা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রাইজবন্ড কেনার পর সেগুলো হাতে রাখতে হয়। কারণ পুরস্কার জেতার দাবি করতে হলে অবশ্যই মূল বন্ডের কপি জমা দিতে হয়। এটি কোনোভাবেই ফটোকপি বা স্ক্যান করা কপি দিয়ে সম্ভব নয়। প্রাইজবন্ডের নম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা লটারি ড্র-তে বিজয়ী হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে ব্যবহার করা হয়।
যদি প্রাইজবন্ড বিজয়ী হয়, আপনার আত্মীয়কে বিজয়ী প্রাইজবন্ড নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অথবা যেকোনো তফসিলি ব্যাংকে যেতে হবে।
পুরস্কারের অর্থ পেতে, একটি আবেদনপত্রের সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এই আবেদনপত্রে যার নাম থাকে, সাধারণত তার নামেই পুরস্কারের টাকা দেওয়া হয়।
ঝুঁকি ও সতর্কতা
এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। প্রবাসীকে অবশ্যই বিশ্বস্ত ব্যক্তির উপর নির্ভর করতে হবে।
প্রাইজবন্ড একটি হস্তান্তরযোগ্য আর্থিক দলিল। এটি যার কাছে থাকে, সেই-ই বৈধ মালিক হিসেবে পুরস্কারের দাবিদার হতে পারে। সুতরাং, কোনো অসৎ বা অবিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে এই কাজ করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপসংহার
বিদেশ থেকে সরাসরি বাংলাদেশের প্রাইজবন্ড কেনার ব্যবস্থা এখনো চালু হয়নি। তবে প্রবাসীরা চাইলে বাংলাদেশে অবস্থানরত কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর মাধ্যমে এটি কিনতে পারেন। এটি হলো সবচেয়ে বাস্তবসম্মত এবং প্রচলিত উপায়। প্রাইজবন্ডের বিশেষত্ব হলো এর ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ সুবিধা ও আকর্ষণীয় পুরস্কার ব্যবস্থা। এ কারণেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশ সরকার অনলাইনে প্রাইজবন্ড বিক্রির ব্যবস্থা চালু করে, তবে প্রবাসীরা আরও সহজে এ সুবিধা নিতে পারবেন। এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হলে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ নিরাপদে বিনিয়োগের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
Latest Blog
প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের পরিমাণ বাড়ানোর একটি অনন্য কৌশল রয়েছে, যেখানে আপনি ৫০০ টাকার প্রাইজবন্ড তৈর...
২৫ আগষ্ট ২০২৪ ৬,৮২২
জোড়া বন্ডের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, এতে পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা অর্ধেক হয়ে যায়। দুটি বন্ড মিলে একটি ম...
২০ মে ২০২৫ ২,০২৭
১১৬তম প্রাইজবন্ড ড্রতে দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন ঢাকার ধামরাইয়ে জন্ম নেওয়া এক সাধারণ যুবক ফিরো...
০৩ আগষ্ট ২০২৪ ৬,৩৭৭
"প্রিমিয়াম নম্বর" ফিচারটি প্রাইজবন্ড প্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ উপহার। এখন থেকে সহজেই আপনার সংগৃহীত...
১৫ আগষ্ট ২০২৫ ১,৪৩৭
সারাজীবন কষ্ট করে হয়ত কিছু টাকা জমিয়েছেন। কিন্তু কোথায় টাকা খাটাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ যে কো...
১৬ মে ২০২৪ ৪,৯৬৫
প্রাইজবন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক নয়। যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক নগদ টাকা দিয়...
১৪ মে ২০২৪ ৪,০৪৫
লাইফটাইম মেয়াদ" মানে এটি চিরস্থায়ী নয়, বরং এটি নির্ভর করে সার্ভিসের অস্তিত্ব এবং আপনার সক্রিয় ব্যবহা...
০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১,৮২৩
১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্র ২রা ফেব্রুয়ারি, রবিবার, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।
০২ জানুয়ারী ২০২৫ ১০০,৮৫৪
একটি নম্বর একবার বিজয়ী হওয়ার পর কিভাবে আবার বিজয়ী হয়? পরের ড্রতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে তো আর বি...
২৯ মে ২০২৪ ৩,৫৮৪








