প্রাইজবন্ড কি এবং কেন?
বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর কর্তৃক প্রবর্তিত এক প্রকার কাগুজে মুদ্রা। প্রাইজবন্ড লটারির মতো হলেও কিন্তু লটারি না। লটারির ক্ষেত্রে একবার ”ড্র” হয়ে গেলে ঐটার মেয়াদ চলে যায় এবং টিকেটের মূল্যও থাকেনা। লটারিতে জয়ী না হলে পুরো টাকাটাই লস। এদিকে প্রাইজবন্ড এর ”ড্র” হয়ে যাওয়ার পরও এর মেয়াদ শেষ হয় না। পরবর্তী ”ড্র” এর সময়ও এর মেয়াদ থাকে। অর্থাৎ প্রাইজবন্ডের মেয়াদ শেষ হয় না। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হল প্রাইজবন্ড এর কয়েকবার ”ড্র” হওয়ার পরও, চাইলে সেগুলো ভাঙ্গিয়ে আবার টাকা নিয়ে আসা যায়। তবে প্রাইজবন্ডের গ্রাহক কোনো সুদ বা লভ্যাংশ পাবেন না। আসলে প্রাইজবন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয় এবং তা কিনে সরকার সে ঋণ পরিশোধ করে।
প্রাইজবন্ড কার জন্য বেশী প্রযোজ্য?
যাদের হাতে অল্প টাকা, তাদের জন্য প্রাইজবন্ড: ঝুঁকি কম, সুযোগ বেশি! প্রাইজবন্ড কিনে আপনার মূল টাকা সবসময় নিরাপদ থাকে। জিতলেন না জিতলেন, টাকা ফেরত পাবেন। নিজের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করার জন্য প্রাইজবন্ড হতে পারে দারুণ সমাধান। এ বন্ড ক্রয় করে গ্রাহক তার ব্যক্তিগত লাভের পাশাপাশি দেশ গড়ার কাজেও নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। অল্প টাকাওয়ালাদের জন্য সঞ্চয়ের স্মার্ট মাধ্যম হলো প্রাইজবন্ড।
প্রাইজবন্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম প্রাইজবন্ডের স্কীমটি চালু করে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করেই এই প্রকল্পের প্রবর্তন করা হয়েছে। সরকার জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এর মাধ্যমে সরাসরি জনগণের কাছ থেকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় বন্ডের ঋণ সংগ্রহ করে প্রাইজবন্ড বিক্রয় করার মাধ্যমে এবং সরকার তা আবার কিনে নিয়ে সে ঋণ পরিশোধ করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থ আহরণ করা অনেকটাই সহজতর। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মূল্য স্ফীতিও রোধ করে যা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের মুদ্রানীতির একটি হাতিয়ার।
প্রক্রিয়া:
পুরস্কারের টাকা তুলতে গেলে বন্ডের রসিদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, ব্যাংক হিসাবের বিবরণ, নমিনি এবং প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক শনাক্তকারী স্বাক্ষর লাগবে। ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ”ড্র” অনুষ্ঠিত হয় বছরে চারবার: ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর। বন্ড কেনার দুই মাস পার হওয়ার পর প্রাইজবন্ড ”ড্র”র আওতায় আসে। ”ড্র” অনুষ্ঠানের দুই বছর পর্যন্ত পুরস্কারের টাকা দাবি করা যায়। এর মধ্যে কেউ দাবি না করলে পুরস্কারের অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়। আপনি “ড্র” এর ফলাফল দেখতে পারবেন পত্রিকায় অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব সাইটে। আর যদি প্রাইজবন্ডে পুরস্কার না পান, তবে যেকোনো সময়ে প্রাইজবন্ডের সমমূল্যের টাকা সরকারি/বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে অথবা পোস্ট অফিসেও ভাঙ্গাতে পারবেন।